শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ জিয়াউল হক:
জুমার দিনের মর্যাদা ও সম্মান সপ্তাহের অন্যদিনের চেয়ে বেশি। এই দিনকে আল্লাহতায়ালা সবদিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। সুতরাং এ দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। জুমার দিনে অনুচিত কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি। এসব কাজের কয়েকটি হলো
জুমার দিনে সূর্য হেলে যাওয়ার পর এমন ব্যক্তির জন্য সফরে বের না হওয়া, যার ওপর জুমা ওয়াজিব।
খুতবার সময় খতিবের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা আবশ্যক। খুতবার সময় অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবার সময় চুপ থাকার গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে কেউ কথা বললে তাকে ‘চুপ কর’ বলতেও নিষেধ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, চুপ কর, তাহলেও তুমি অনর্থক কথা বললে। সহিহ মুসলিম : ৮৫১
নামাজের মধ্যে অধিক নড়াচড়া না করা। ইমাম সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে কাতার থেকে বেরিয়ে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলা গর্হিত কাজ। কারণ এর দ্বারা অন্যান্য মুসল্লিদের কষ্ট হয়। মুসল্লিদের কেউ কেউ জুমার পরবর্তী সুন্নত ছেড়ে দেয়। অথচ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মাঝে যে জুমার নামাজে শরিক হলো, সে যেন জুমার শেষ চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে।’ সহিহ মুসলিম : ১/১১২
জুমার রাতে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত গল্প-গুজব না করা। দেরি করে ঘুমাতে না যাওয়া। কারণ, ফজরের জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন করে নামাজ না পড়া কবিরা গোনাহ। নবী কারিম (সা.) বলেন, আল্লাহর নিকট উত্তম নামাজ জুমার দিনে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা।
জুমার নামাজ শেষ না হতেই মসজিদে উঁচু আওয়াজে কথাবার্তা বা তেলাওয়াত শুরু করে দেওয়া; যার কারণে অন্যদের তেলাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটে এবং নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের কষ্ট হয়।
নামাজ অবস্থায় যা নিষিদ্ধ তা খুতবার মাঝেও নিষেধ। যখন ইমাম খুতবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়ায় ওই সময় পানাহার, কথাবার্তা, তাসবিহ পাঠ, সালাম দেওয়া, হাঁচি বা সালামের জবাব দেওয়া নিষেধ। খুতবায় নবীজির নাম পড়া হলে উচ্চারণ করে দরুদ শরিফ না পড়া। তবে মনে মনে পড়া যাবে। এমনিভাবে সাহাবাদের নাম এলেও। ‘রাযিয়াল্লাহু আনহু’ হাঁচির জবাবে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মনে মনে বলা যাবে। ইমামের কাছে বা দূরে সব মুসল্লিদের জন্য একই বিধান।
খুতবা চলাকালীন কোনো নামাজ, সেজদা আদায় ও কোরআন তেলাওয়াত করা নিষেধ। দুনিয়াবি কথা বলার তো প্রশ্নই আসে না। কেউ যদি খুতবা শুরু হওয়ার আগে সুন্নত পড়তে থাকে তাহলে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেওয়া। তবে তৃতীয় রাকাত শুরু করলে, চার রাকাত পূর্ণ করে নেওয়া।
খুতবার মাঝে খতিব দোয়ার বাক্য উচ্চারণ করার সময় শ্রোতাদের জন্য হাত উঠানো এবং মুখে আমিন বলা যাবে না।
জুমার প্রথম আজানের পর ক্রয়-বিক্রয় অথবা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরুহে তাহরিমি। জামাত দাঁড়ানোর আগে মসজিদের ভেতরে বা দরজার সামনে কেনাবেচা করা কঠোর গোনাহ।
আরবি ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় খুতবা পড়া অথবা আরবির সঙ্গে অনারবি ভাষায় কবিতা, ব্যাখ্যা দেওয়া সুন্নাহ পরিপন্থি এবং মাকরুহে তাহরিমি।
কাতার ডিঙিয়ে সামনে না যাওয়। জুমার দিন ইমামের কাছাকাছি বসার আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা উচিত। এর জন্য আগে আগে মসজিদে চলে আসতে হবে। মসজিদে পরে উপস্থিত হয়ে অন্য মুসল্লিদের ডিঙিয়ে কষ্ট দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা গোনাহের কাজ। খুতবা চলা অবস্থায় কেউ যদি কাতার ডিঙিয়ে সামনে যেতে চায়, তাহলে তাকে যেতে না দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। একবার হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন। তার চোখে পড়ল এক ব্যক্তি মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি তাকে বললেন, ‘ইজলিস’ তুমি বসে যাও! তুমি মানুষকে কষ্টও দিচ্ছ। সুনানে আবু দাউদ : ১১১৮
মসজিদ আল্লাহর ঘর। যে ব্যক্তি আগে এসে কাতারে বসে গেছে। নামাজের কাতারে বসার ক্ষেত্রে সে অধিক হকদার; পরে যে মসজিদে গমন করবে তার থেকে। কারও জন্য জায়েজ নেই তাকে উঠিয়ে তার স্থানে বসে পড়া। কেননা এমন করা অহংকারীর আলামত। এই কারণে উপরোক্ত হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। খুতবা শুরুর আগে যদি কাতারে প্রশস্ত জায়গা থাকে, এভাবে বলে দেওয়া, অনুগ্রহ করে আমাকে বসার জন্য একটু জায়গা দিলে ভালো হয়।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাথর কুচি অপসারণ করল বা নড়াচড়া করল (খুতবার মাঝে হাত, বিছানা, কাপড় নিয়ে খেলতে থাকে) সে যেন অনর্থক কাজ করল। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করার পর জুমার নামাজে এলো, নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনল, তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করল। সহিহ মুসলিম : ১৮৭৩
খতিব খুতবা শুরু করে দিলে অহেতুক উঠবস করা শিষ্টাচারবহির্ভূত।
ভয়েস/আআ